মনে পরে কী সেই কালরাতের কথা?মনে পরে কী সেই রাতের কথা যখন রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারে চালানো হয়েছিল হত্যাকান্ড ? হয়তো আমাদের মনে পরবে না , তবুও সেই রাতটা কিভাবে যেনো চোখের সামনে ভেসে উঠে!
>
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর দেয়া ৭ই মার্চের ভাষনের পরে বাংলার পরিবেশ গরম ছিল,বাঙালীর রক্তে ফুঁসে উঠেছিল দেশের প্রতি ভালবাসা, দেশকে স্বাধীন করার চেতনা।..
।
১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ বৃহস্পতিবার...
.
গভীর রাতে হঠাৎ করে দানবের মতো বৃহদাকার কিছুর শব্দ ভেসে আসতে লাগলো,মানুষ তা দেখতে বের হলে দেখতে পায় যে ঝড়োগতিতে জলপাই রঙের দানব আকৃতির ট্যাংক গুলো এগিয়ে আসছে আর সাথে কয়েক শত জিপ গাড়ি।..
দেখতে দেখতে শুরু হয়ে গেল হত্যাকান্ড,কামানের গোলা এসে পরতে লাগলো মানুষের ঘরবাড়িরর উপরে।
কিছুক্ষনের মধ্যেই ভগ্নাস্তুপে পরিনত হলো শহর টা।..
রক্তে জড়ানো লাশ রাস্তায় পরে আছে,মানুষেত ঘড়ে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। লাশ গুলোর পা থাকলে মাথা নেই,আবার হাত থাকলে দেহ নেই। গোলার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে লাশ গুলো।
রাস্তার পাশে থাকা কুকুরগুলোও বাঁচতে পারেনি।সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছিল পাক সেনাদের গড়া একটা জাহান্নাম।
রাস্তাঘাট লাল রক্তে রাঙিয়ে আছে,কিছু কুকুর এসে বিচলিত হয়ে কুকাচ্ছে,মনে হচ্ছিল এগুলোই ছিল তাদের আর্তনাদ।কালরাতের অন্ধকারে ইতিহাস হতে মিটিয়ে দেয়া হলো কিছু বুদ্ধিজীবীদের নাম।
>
--বারেক ভাই হুনছনি শহরে কাইল রাতে কী কী হইছে?এত্ত গুলা মাইনসে মাইরা লাইছে।শহর হতে নাকি মানুষের চিহ্ন উঠায়ে ফেলা হইছে.. (আজাদ)
--আরে হ রে ভাই হুনলাম তো,আহারে এত্তগুলা মানুষ মারা গেল আমরা কিছুই করতে পারলাম না? (বারেক)
--ভাই পাকিস্তানিরা তো আমগো ও মাইরা ফেলবো?
--আরে ভয় পাস কেন? এইটা আমাদের দেশ, আমাদের জন্মভূমি!! ওরা আমাদের একজন মরলে আমরা ১০ জন কে মারব।মুজিব সাহেবের ভাষন শুনছ নাই? (বারেক)
--হুম্ম হুনছি তো ভাই,এখন কী হবে? (আজাদ)
--যুদ্ধ হবে,রক্তক্ষায়ী যুদ্ধ এরপর হবে দেশ স্বাধীন দেখিস! (বারেক)
>
রাতের অন্ধকারে গ্রামের মেঠোপথ বেয়ে পাকিস্তানিরা এগিয়ে আসছে, তাদের জিপ গাড়ি গুলার গেডলাইট গুলো জলছে,জলপাই রঙের ট্যাংক গুলো এগিয়ে আসছে গ্রামটার দিকে। কিছু ক্ষন পরেই শুরু হলো গুলি,জোনাকি পোকার মতো ললাট হয়ে এগিয়ে আসছে গুলি,সামনে যা পরছে তাকে গ্রাস করে এগিয়ে আসছে জিপ গুলো।..
মানুষ কী করবে জীবন বাঁচাতে লুকিয়ে পরলো,কেউ ঝাপ দিল পানিতে, সাতার জানেনা এর পরেও দিল,তাদের বন্দুকের গুলি না খেয়ে পানিতে ডুবে মারা যাবে।..
কেউ পালালো ঝোপঝাড় এর আড়ালে।যাদের কপাল ভাল ছিল তারা বেচে গেল আর যারা মারা গেল তাদের নিথর দেহ পরে রইল পানিতে,ঝোপঝাড়ে , ঘরে রাস্তাঘাটের পাশে।
>
বারেক সকাল বেলা বুকে সাহস সঞ্চার করে বের হলো গ্রামের পরিস্থিতি দেখতে।
।
অতঃপর সে আজাদের বাড়িতে গেলো।সেখানে গিয়ে সে হতবাক হয়ে গেলো।নির্বাক ভাবে দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষন, কালকে যে আজাদের সাথে দেখা হয়েছিল সে আর বেচে নেই। একটা গুলি এসে তার কপাল ভেদ করেছে।রক্ত গুলো সাড়া মুখে জমাট বেধে আছে,বারেকের চোখে তখন অশ্রু। চোখ গুলো জানি কেমন লাল হয়ে উঠল একদম কয়লার ফুলকির মতো।
গ্রাম ঘুড়ে ৪১ টা লাশ খুঁজে পেল।গ্রামটার প্রায় ৪ ভাগের একভাগ মানুষ মেরে ফেলা হয়েছে --
বারেক এর মতো লক্ষ লক্ষ মানুষের অংশগ্রহণে তৈরি হলো মুক্তিবাহিনী। সকলের চোখে বদলার আগুন দাউদাউ করে জ্বলছে। তাদের চোখে একটাই স্বপ্ন দেশ স্বাধীন হবে।...
>
লক্ষ লক্ষ ভাই বোনদের অংশগ্রহনে শুরু হলো মুক্তি যুদ্ধ!! নয়মাস যুদ্ধের পরে দেশ হলো স্বাধীন। দেশ পেল একটা জাতীয় পতাকা,লক্ষ লক্ষ মা হারালেন তাদের ছেলে মেয়ে,ধর্ষিত হলো অনেক মা বোন, রাষ্ট্র ভাষা বাংলা হলো।আর এই যুদ্ধের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল মাতৃভূমি আর মাতৃভাষা। বাংলা এখন আমাদের জনের ভাষা মনের ভাষা, রক্তের বিনিময়ে কেনা বাংলা ভাষা।
>
দেশ স্বাধীন হওয়ার আজকে ৪৪ বছর পরেও "জনাব বারেক" এখন রিকশা চালক,যুদ্ধে পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে একটা পা বাকা হয়ে গেছে জীবিকার টানে সে পা নিয়ে রিকশা নিয়ে নেমে পরেছে রাজপথে।সরকার নাকি মুক্তিযুদ্ধাদের ভাতার ব্যবস্থা করেছেন তা শুধু তিনি শুনেই যাচ্ছেন আর তা পেয়ে দেখলেন না।যে যুদ্ধ করেনি তার হাতের মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেখে তার চোখের কোন বেয়ে জল পরে।আর যেই সনদে তার নাম থাকা উচিৎ সেখানে তার নাম না পেয়ে কাঁদেন। রোদ-বৃষ্টি তে পুড়ে রিকশা চালান দু মুঠো ভাতের জন্য।লড়াই করে যাচ্ছেন জীবনের সাথে।
তার কাছে কোন মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেই,মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পান না তবুও তনি গর্বিত তিনি যুদ্ধ করেছেন, দেশকে স্বাধীন করার পিছনে তার হাতটাও বিদ্যমান, তিনি গর্বিত তিনি বাঙালি।
>
- আজকে স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরেও মা বোনের ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে।ধর্ষিত হচ্ছে অনেক মা-বোন। যারা ধর্ষক তারা তো আর পাকিস্তানি না নিজের দেশের মানুষ। বাংলার মাটিতে বেড়ে উঠা মানুষ।তবু
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন