ব্লগার কে ফলো ফেসবুকে করুন!

রবিবার, ২৭ মার্চ, ২০১৬

একটি আত্মহত্যা


নাহিদ পরিবারের বড় ছেলে...।
খুব ছোট পরিবার।বাবা মারা যাওয়ার পরে যেন তার পরিবারটা আর ছোট হয়ে গেছে।
প্রায় ৭-৮ বছর আগে তার বাবা একটা বাস এক্সিডেন্ট এ মারা যান...
দুই বোন ও তার মাকে নিয়ে সে বসবাস করে।
পরিবারের সকল চাহিদা নাহিদকেই মেটাতে হয়।
কারন তার বাবা নেই.....।
কজের ব্যাস্ততা ও সময়ের কারানে সে বাবা হারানোর দুঃখটা প্রায় ভুলেই গেছে..।
-
রোজ ঘুম থেকে রেডি হয়ে নিজর বাইকে করে চলে যেত ব্যাংকে,কারন সে ব্যাংক কর্মকর্তা।
খুব নম্র ভাবে জীবনযাপন করত..।
-
এখন বিয়ে করেনি। কোন মেয়ের দিকে চোখ তুলেও তাকায় না...।
কিন্তু ব্যাংকের একটা মেয়ে কে তার খুব ভাল লাগত নাম সুরভী সুলতানা...
এমনকি সে মেয়েটাকে ভালবেসে ফেলে...
কিন্তু,! কখনও বলতে পারেনি..
-
একদিন সকালে......
ঘড়িতে সময় ৮:৩০।
নাহিদ তার কর্মস্থলে যাচ্ছে....
একটা বাসস্টপ এর সামনে গিয়ে থামল তাও সুরভী কে দেখে...
নাহিদঃএই যে শুনছেন?
-জ্বি,বলেন..
-কী হল আজকে এখন যাননি?এত দেড়ি কেন?
-বাসায় একটু কাজ ছিল তাই দেড়ি হয়ে গেল।আর সময়মত বাস বা সি,এন,জি কিছুই পাচ্ছি না তাই এত লেট...
-ও, আচ্ছা।,,,, চলেন আমার সাথেই একসাথে চলে যাই।
-ধন্যবাদ আপনাকে,,,,চলেন।
- না পৌছাতেই ধন্যবাদের মালা পরাচ্ছেন?
-আচ্ছা আগেই দিয়ে দিলাম...
-
(এরকম প্রায়ই সুরভী নাহিদ এর সাথে যাওয়া আসা করত।
নাহিদ তো খুশিই হতো,কারন ভালবাসার মানুষটার পাশে যে থাকত।)

সুরভী মেয়েটা কিছুদিন ধরে কেমন যানি বদলে গেছে..
নাহিদ এর প্রতি তার টানটা বেড়ে গেছে মনে হয় সেও তাকে ভালবেসে ফেলছিল.....
কিন্তু প্রকাশ করতে পারতনা...।
-
''হায়রে মন পারিস আগাতে,না পারিস পিছাতে।
দুইটি মন মিলে গেছে একই সুতোয়""
-
আর সেই সুতোটা হল ভালবাসার রজ্ঞীন সুতো.....
-
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব ভালবাসা দিবস।
নাহিদ ঠিক করল সে অই দিনেই সব কিছু সুরভী কে বলে দিবে,মানে প্রপোজ করবে।
১৪ ফেব্রুয়ারি আসল সে সুরভী কে প্রপোজ ও করল আর সুরভী রাজিও হতে গেল কারন সেও তো তাকেই ভালবাসে....
-
বেশ ভালই কাটছিল তাদের দিনগুলো...
দুজনে দুজনকে ভালবেসে হারিয়ে থাকত দূর কোন অজানায়...
সারাদিন ফোনালাপ,যখন ইচ্ছা দেখা করত...
এক কথায় মেয়েটার কাছে নাহিদ ই সবকিছু...
-
তাদের মাঝে সব কিছুই ঠিক আছে তবে সুরভীত পরিবারের লোক গুলো ঠিক ছিল না...।
বিশেষ করে তার ভাই গুলো...
খুব ধনী পরিবারের ছেলে তো তাই।
তারা কখনই তাদের সম্পর্ক মেনে নিবে না...
-
তাদের প্রেম প্রায় ১বছর ধরে চলছে....।
****
একদিন সুরভীর মা তাকে বলল----→
-আজকে বাসায় থাকিস,,, বিকেলে কোথাও যাসনে!
-কেন মা?
-তোকে দেখতে ছেলে পক্ষ আসছে।খুব ভাল ছেলে....
-মা আমি এখন বিয়ে করব না।
-ছেলেটাকে দেখবি তো,খুব হ্যান্ডসাম ও একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার।....
-আমি এতো কিছু বুঝতে চাইনা... করব না তো করবই না।
-আমি কিছু জানি না যা তর ভাইয়ার সাথে কথা বল...
-
[তার ভাইয়া খুব রাগী তাই সে আর না বলল না।
বিকেলে ছেলে পক্ষ এসে তাকে দেখেও গেল।
ছেলে পক্ষের নাকি মেয়ে পছন্দ হয়েছে।
কিছুদিন পর বিয়ের তারিখ ঠিক করতে আসবে।]
-
সুরভী তো রূম বন্ধ করে বালিশে মুখ গুঁজে ঠুকরে ঠুকরে কাঁদছে।...
.
পরের দিন সকালে......>
-হ্যাল নাহিদ,
-হ্যা বল।
-জরুরী কথা আছে ফোনে বলতে পারব না,দেখা করতে পারবা আমার সাথে?
হুম্ম অবশ্যই পারব...কখন কোথায় দেখা করবা সেটা বল....??
(সুরভী সময় ও ঠিকানা বলে ফোন রেখে দিল)
****
পরের দিন সকালে ----

নাহিদ তো সময় মত হাজির----

-কি বলবা তাড়াতাড়ি বল?
-কাঁদোকাঁদো কন্ঠে..... কালকে আমাকে দেখতে ছেলে পক্ষ আসছিল।....সামনে আসবে বিয়ের তারিখ ঠিক করতে।...
-কী বলছ এসব??কিভাবে কী হল?
-আমার ভাইয়া সব করছেন...
-এখন আমরা কি করব?
-চলো আমারা দূরে কোথাও চলে যাই....অনেক দূরে।...
-না সুরভী এটা সম্ভব না....
যেখানেই যাব তোমার ভাইয়া একদিন খুঁজে বের করবেই..
এক কাজ কর তোমার ভাইয়াকে সব বলে দাও...
-ভাইয়াকে কিভাবে বলব?? সে তো আমাকে মেরেই ফেলবে...
-আচ্ছা তোমার আম্মুকে সব বুঝিয়ে বল..
-আচ্ছা আমি তাকে বলে দিব..
-আচ্ছা এখন বাসায় যাও...পরে আবার দেখা হবে..।
-আচ্ছা ভাল থেকো...।

-
( বাসায় গিয়ে সে তার মা কে সব কিছু জানিয়ে দিল...।
কি আর হবে??
তাকে ঘরে বন্দি করা হল সাথে ফোনটা ও নেয়া হল....
১ দিন যায়,,২দিন যায়,,
১ সপ্তাহ চলে গেল নাহিদের সাথে কোন যোগাযোগ নেই..
নাহিদ তো পাগলের মত হয়ে গেছে...
ফোন দিয়ে শুধু ট্রাই করেই যাচ্ছে ...
আর এদিকে---
সুরভীর বিয়ে হয়ে গেছে...
মেয়েটা বিয়ে করছে খুবই কষ্টে...
বিয়ের পরে ছেলেটা তাকে তার সাথে বিদেশে নিয়ে চলে গেল....
-
নাহীদ যখন এ কথা জানতে পারে তখন সে ভেজ্ঞে পরে...
কাউর সাথে কথা বলে না।অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে...
নিজেকে শুধু রূম বন্দী করে রেখেছে.....)
-
একদিন রাত প্রায় ২:০০ টা বাজে....
তার বোন তাকে খাবার খেতে ডাকতে আসে....
সে তাকে বকে পাঠিয়ে দিল...
তখন সে ডাইরি তে কি জানি লিখতেছিল....
-
সকাল ৬:০০ টা বাজে.....
তার মা ওযু করে নামাজ পড়ে বাইরে হাটতে যান, যা তার নিয়মিত অভ্যাস....
বাইরে রাস্তায় বের হতেই বাড়ির পাশে একটা মানুষ কে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখা যাচ্ছে...
তার মা সম্মুখ্যে যেতেই দেখে এততারই সন্তান নাহিদ...
রক্তমাখা দেহটা পরে আছে রাস্তায়...
লাল রক্ত জমাট বেধে আছে...
-
মানেতো বুঝতেই পেরেছেন...
ছেলেটা আত্মহত্যা করছে.....
পরে আবিষ্কার করা গেল যে সে ডায়রির পেজে সুইসাইড নোট লিখে রেখে গিয়েছিল---।
**
বাবা মারা যাওয়ার পরের তাদের ছোট সংসার টা যেন আরও ছোট হয়ে গেল....
পরিবারে নেমে আসল দুঃখের ছায়া..
যে ছায়া কখন দূর হবার নয়....
সে তো চলে গেল...
অন্ধকার করে গেল তার পরিবার টাকে
-
-
হায়রে ভালবাসা কী জিনিশ??
কারও জীবনে সুখের পায়রা হয়ে উড়ে আসে..
আবার,
কার জীবন কেড়ে নেয় এই পায়রা...
-
এমন ঘটনা অহরহ ঘটেই চলছে...
কখন চাইব না যে কার সাথে এমন হউক...
** জয় হোক ভালবাসার **
-
ভালবাসার মানুষগুলো চীরকাল সুখে থাকুক...।
-
-
লেখাঃ Anik Hasan Sagor

কোন মন্তব্য নেই: