ব্লগার কে ফলো ফেসবুকে করুন!

রবিবার, ২৭ মার্চ, ২০১৬

ভালবাসার গল্প


বারান্দার একপাশের ছোট্ট একটা বাগান । বাগানের
একপাশে বেলী ফুলের গাছ । একটা ফুলের ডগায়
বৃষ্টির একটা ফোঁটা রাস্তার আলোতে চিকচিক
করছে । বৃষ্টির ফোঁটাটার দিকে সম্মোহিতের মত
তাকিয়ে আছে নীরব ।
আস্তে আস্তে হাতটা তুলে বৃষ্টির
ফোঁটাটাকে আলতো করে ছুঁয়ে দিল নীরব ।
ফোঁটাটা তার আঙ্গুল
থেকে কবজি বেয়ে নিচে পড়লো । ফুল গাছটার
সাথে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে তার ।
৩ বছর আগেঃ
বারান্দায় দাঁড়িয়ে অবন্তীর সাথে কথা বলছে নীরব ।
তাদের সম্পর্কের বয়স ১১ মাস। দুইজনই প্রেমের
সাগরে হাবুডুবুই খাচ্ছে বলা যায় । প্রতিদিন ঘণ্টার
পর ঘণ্টা তারা একজন আরেকজনের সাথে কথা বলে ।
-তোমার সবচেয়ে পছন্দের ফুল কোনটা ? নীরব
জিজ্ঞেস করলো ।
-সেটা তো তোমাকে আগেও বলছি ।
-সরি । আমি ভুলে গেছি । আবার বল না প্লিজ ।
-না, বলব না । অভিমানের সুরে বলল অবন্তী ।
-সরি । সরি । সরি । প্লিজ বল না জান !
- ঠিক আছে বলছি । এইবার ভুলে গেলে তোমার খবর
আছে । মনে থাকবে?
-হ্যাঁ, মনে থাকবে ।
- সব ফুলই আমার ভালো লাগে । তার
মধ্যে বেলী ফুল সবচেয়ে বেশী ভালো লাগে ।
- তাই নাকি ? জানো আমাদের বারান্দায়
অনেকগুলা বেলী ফুল ফুটেছে । ফুলের সুঘ্রাণে চারদিক
ভরে গেছে ।
-বারান্দায় বেলী ফুল ফুটে কিভাবে?
-আমাদের বারান্দার
একপাশে একটা ছোটোখাটো বাগান করেছি ।
ওখানে বেলী ফুলের গাছ লাগিয়েছি একটা । ওখানে ফুল
ফুটেছে ।
- ও আচ্ছা । তুমি কি আমাকে কয়েকটা বেলী ফুল
দিতে পারবা ? অনেকটা অনুনয়ের সুরে বলল
অবন্তী ।
-হ্যাঁ, অবশ্যই পারব । পরে যেদিন তোমার
সাথে দেখা হবে ওইদিন নিয়ে আসব অনেকগুলা ।
কিন্তু পরবর্তীতে দেখা করার সময় ফুল নেয়ার
কথা বেমালুম ভুলে যায় নীরব । এইজন্য
অবন্তী কিছুক্ষণ গাল ফুলিয়ে বসে ছিল । অনেক
কষ্টে তার অভিমান ভাঙ্গে নীরব । কথা দেয়
পরবর্তীতে দেখা করার সময় অবশ্যই নিয়ে আসবে ।
কিন্তু সেই পরবর্তী সময়টা আর আসে না । এর
মাঝেই হঠাৎ করে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়।
কিভাবে যেন অবন্তী নীরবের জীবন
থেকে হারিয়ে যায় ।
দুইদিন পরঃ
বাসা পরিবর্তন করছে নীরবরা । সব জিনিস পত্র
ট্রাকে তুলা হয়েছে । নীরব নিচে দাঁড়িয়ে ফুল গাছটার
দিকে তাকিয়ে আছে । নীরব ইচ্ছে করলেই
গাছটা টবে স্থানান্তরিত করে নিয়ে যেতে পারতো ।
কিন্তু গাছটা উপড়াতে একদমই ইচ্ছে করছে না তার ।
গাছটা যেখানে আছে সেখানেই থাক ।
-উপরে তাকিয়ে কি দেখিস? ট্রাকের উপর উঠ ।
নীরবের বাবা নীরবকে বলল ।
নীরব কিছু না বলে ট্রাকের উপর উঠলো । উঠার ২
মিনিট পর ট্রাকটা আস্তে আস্তে চলতে শুরু
করলো । নীরব শেষ বারের মত ঘাড় ঘুরিয়ে ফুল
গাছটার দিকে তাকাল । তার চোখ
ঝাপসা হয়ে আসলো । পকেট থেকে মোবাইল বের
করলো । ম্যাসেজের ডেলিভারি রিপোর্ট অফ
করে ম্যাসেজটা লিখল , “সরি, আমি আর
কোনদিনই ওই গাছের ফুলটা তোমাকে দিতে পারব
না ।” ম্যাসেজটা লিখে অবন্তীর নাম্বারে সেন্ড
করলো নীরব । এই নাম্বারটা এখন আর ব্যবহার
করে না অবন্তী । এইজন্য ডেলিভারি রিপোর্ট অফ
করে মেসেজটা সেন্ড করেছে নীরব যাতে ম্যাসেজ
সেন্ডিং ফেইল্ড এই রিপোর্টটা দেখতে না হয় ।
বারবার কেন এভাবে নিজের সাথে অভিনয় করে নীরব
সেটা সে গত একবছরেও ভেবে বের করতে পারেনি ।
নীরবের ঠোঁটে খুব হালকা একটা হাসি ফুটে আছে ।
সেই হাসি কষ্টের নাকি আনন্দের সেটা বুঝার সাধ্য
পৃথিবীর কারও নেই ।

কোন মন্তব্য নেই: