রাত প্রায় ২:৪৫ মিনিট।
অনেক কাজ ও ব্যাস্ততার কারনে এখন ঘুমোতে পারিনি।
-
মা এসে দরজায় কড়া নাড়লেন -- ঠক,,ঠক,,ঠক!!!
আমি তখন ল্যাপটপে অফিসের কাজে ব্যস্ত --
মাঃকিরে এখনও জেগে কেন?ঘুমাবি না?
কয়টা বাজে দেখছিস?
--এইতো মা সামান্য কাজ আছে হলেই ঘুমিয়ে পরব তুমি এখন যাও।-
মাঃতোর কাজ সারাজীবন ই থাকবে অন্তত রাতে তোএকটু আরাম করবি?
--কি যে বলো মা।তুমি তো জানই তোমার ছেলে যে কত ব্যস্ত?
মাঃঅই ঘুমা নাহলে এখন মারব।তুই বড় হয়েছিস দেখে কি তোকে মারতে পারব না??
ঘুমা --
--আচ্ছা বাবা যাও তোমার কথা শুনলাম আর কাজ বন্ধ করলাম।
(অতঃপর রাত ৩ টা বাজে
ল্যাপটপ টা বন্ধ করে ঘুমোতে গেলাম।
সকাল ৮টা বাজে উঠতে হবে তাই এলার্ম সেট করে ঘুমালাম।)
-
সকাল ৮ টা বাজে ঘড়িটা রাগান্বিত ভাবে বেজেই যাচ্ছে---
যন্ত্র তাই কিছু বলতে পারেনা।
-
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।
ব্যস্ততার কারনে আর ভালভাবে কিছু খেতে পারলাম না।
মাঃকিরে কি খালি এসব??ভাল মত খেয়ে যা।
--না মা ৯ টার মধ্যে অফিসে পৌছতে হবে। আর আমি ক্যান্টিন থেকে কিছু খেয়ে নিব।
মাঃতোকে নিয়ে আর পারলাম না আচ্ছা যা সাবধানে যাস।
-
(আবার শুরু হয়ে গেল সেই ব্যস্তময় জীবন।
বন্দি হয়ে গেলাম সময় ও কাজের কাছে)
-
★অফিসে পৌছানোর কিছুক্ষণ পরেই মার ফোন আসল---
-বাবা কিছু খেয়েছিস?
-না মা একটু পরে খাব।
আবার পরে কেন?? এখন খেয়ে আস!!
(রাগান্বিত কন্ঠে)
-আচ্ছা মা রাখ আমি খেয়ে নিব আর শুধু শুধু চিন্তা করিও না।
-চিন্তা কিভাবে করব না??তুই তো আমার ছেলে।তোর জন্য চিন্তা না করলে কার জন্য করব?আচ্ছা রাখ।
-আচ্ছা রাখি ভাল থেকো।
-
(আম্মুর কথায় সামান্য ইমোশনাল হয়ে গেলাম।ভাবতে লাগলাম যে মার মত কেউ নেই।
আসলেই কেউ নেই।
কে আমাকে এতো ভালবাসবে?
কে আমার এতো খেয়াল রাখবে?
???)
-
এই ব্যস্ততম জীবনে আপনজনদের কথা যেন ভুলেই যাই।
ছুটে চলছি শুধু কাজের পিছনে--
ছুটে চলছি শুধু টাকার পিছনে।--
হায়রে টাকা দূনিয়াটা ভুলাইলি।
-
মার হাতে বকা খাইনা অনেক দিন ধরে।,,
তাই ইচ্ছা করেই বাড়িতে দেরি করে ফিরলাম ---
জানি বকা শুনতেই হবে তাও ভাল কারন মার মুখ থেকে শোনা বকা আর তার থেকে পাওয়া দোয়া একই কথা।
-
বাসায় ফেরার পর-----
-তোকে আর কত বলব?বাসায় তাড়াতাড়ি ফিরিতে??কথাই শুনিস না। কি পাইছস তুই??
--কি আবার পাব মা?
- আচ্ছা যা ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নে সকাল ভালভাবে খাসনি।
দুপুরে খেয়েছিস নাকি তাও সন্দেহ।
--আচ্ছা, আসছি।
(ভাবছিলাম এত্তগুলা বকা খাব কিন্তু না।সামান্যতেই থেমে গেল।)
-
খাওয়ার টেবিলে----
↓
--আচ্ছা মা আমাকে এবার ঈদে শপিং করে দিবেনা??
--এহ এত বড় ছেলেরে আবার শপিং কইরা দিতে হবে?
-হ্যা,কি দিবেনা??
--তুই তো কাজ করিস তাহলে তোর টাকা দিয়ে কিনে নে।
-আচ্ছা ঠিক আছে কিনব তাহলে।
আচ্ছা তুমি কিছু কিনবে না??
-আমি কিনব কেন?? আমার কি এখন সেই বয়স??
(মার চোখে পানি দেখে পুরোনো কিছু কথা মনে পরে গেলো।
বাবা হারানোর কথাটা।
ঠিক ২বছর আগে বাবা মারা যান তাও ঈদের আগের দিন রাতে।
সিলেট থেকে ঢাকা আসার পথে বাস এক্সিডেন্ট এ মারা যান।
আর তখন থেকেই এই দিনটা আমাদের কাঁদিয়ে যাচ্ছে--
তাই ভাল মত ঈদ পালন করি না,শুধু ঈদের দিন নামাজ টাই পরে আসি)
************
বাবা মারা যাওয়ার পরে জীবনটাই বদলে যায়।
ছিলাম বিবিএ (BBA) এর ছাত্র হয়ে গেলাম অফিসের কর্মকর্তা।---
জীবন তো আর থেমে থাকেনি।
আম্মুকে আমার ই দেখতে হবে কারন আমি তার সন্তান।
-
-
এমন অনেক মানুষ আছেন যারা কাজে এতোই ব্যস্ত থাকেন যে আপন জন গুলারেই ভুলে যান।
-
আবার অনেকে আছেন যারা এই কাজ ফেলেও ছুটে আসেন আপনজনের ডাকে সাড়া দিতে।
যতই বাধা আসুক।
--
আর যারা আমার মত বাবাহারা তারা তো বোঝেনি এর কষ্ট।
--
নিজেকে এই কাজেই ব্যস্ত রাখতে চাই আর ভুলে থাকতে চাই অপ্রিয় সত্য গুলো
ভাল থাকবেন,
-
অতঃপর সবাইকে পবিত্র ঈদের আন্তরিক শুভেচ্ছা......।
লেখায়ঃ Anik hasan ( মজ্ঞগ্রহের এলিয়েন )
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন